বিজ্ঞপ্তি:

পুরনো সমস্ত পোস্ট রিমুভ করা হয়েছে লিংক সংক্রান্ত যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে । আপাতত টিনটিন এর লিংকটি Update করলাম। ধীরে ধীরে পুরনো সমস্ত পোস্ট ফিরে আসবে এবং নতুন আরো পোস্ট করা হবে । কমিক পড়ুন , কমিক পড়ান আর সাথে থাকুন Bengali PDF Comics এর। ধন্যবাদ ।

সোমবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

শিল্পী অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়

 শিল্পী অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়

অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়


 কমিকস্ শিল্পী শ্রী অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় মহাশয়ের নামের সাথে পরিচিত নয়, এমন বাঙালি কমিক পাঠক হয়তো শত চেষ্টা করলেও খুঁজে পাওয়া যাবে না । 
একজন প্রকৃত শিল্পীর পরিচয় হয় তাঁর সৃষ্টির মধ্য দিয়ে । তেমনই অভিজিৎ বাবুর ক্ষেত্রেও তাঁর পরিচয় দীর্ঘদিন ধরে আনন্দমেলার পাতায় চলে আসা তাঁর তৈরি ফেলুদা এবং প্রোফেসর শঙ্কু কমিকগুলির মাধ্যমে । 
প্রোফেসর শঙ্কু-কে নিয়ে অভিজিৎ বাবু কাজ করতে শুরু করেন সম্ভবত ৯০ এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে । সত্যজিৎ রায়ের "প্রোফেসর শঙ্কু ও ইউ এফ ও" গল্পটি নিয়ে প্রথম পূর্ণাঙ্গ কমিক তৈরি করে অভিজিৎ বাবু সেটি দেখান সন্দীপ রায় মহাশয়কে । সন্দীপ বাবুই আনন্দ পাবলশার্স এর সাথে তাঁর যোগাযোগ করিয়ে দেন । এবং......তারপর আর তিনি থেমে থাকেননি ।


1996 সালে প্রথম বই আকারে বের হয় "প্রোফেসর শঙ্কু ও ইউ এফ ও"। তারপর থেকে এত বছর ধরে নিয়মিত এঁকে চলেছেন প্রোফেসর শঙ্কু ও ফেলুদা কমিকস ।
শিল্পী দেবাশীষ দেবের কথায়, অভিজিৎ বাবু নাকি হার্জ - এর কাজ দ্বারা খুব বেশি অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন । হার্জ এর সৃষ্টি টিনটিনে যেমন প্রতিটি লোকেশনের বৈশিষ্ট্য এবং সেখানে কালচার সপূর্ণ নির্ভুল ভাবে প্রতিফলিত হয়,তেমনি ফেলুদা বা শঙ্কু আঁকার সময় অভিজিৎ বাবুও চেষ্টা করেন সেই সব লোকেশনের নির্ভুল এবং যথাযথ বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরার । শুরুর বছরগুলোতে এই ব্যাপারটা কিন্তু খুব একটা সহজ ছিল না । কারণ তখন এখনকার মত ইন্টারনেট এত উপলব্ধ ছিল না । আর ছিল না অসংখ্য ভিডিও এবং ছবির সম্ভার। অভিজিৎ বাবুকে সেই জন্য জোগাড় করতে হয়েছিল ন্যাশনাল জিওগ্রাফি পত্রিকার অসংখ্য সংখ্যা । সেখান থেকেই যতটা সম্ভব ছবি এবং তথ্য নিয়ে তৈরি হতো শঙ্কু কমিক গুলি। 
প্রথম ফেলুদা কমিক


কিন্তু 2000 সালে যখন শিল্পী ঠিক করলেন এবার ফেলুদার "গ্যাংটকে গন্ডগোল" গল্পকে কমিকরূপ দেবেন.... তখন ন্যাশনাল জিওগ্রাফি ম্যাগাজিনের ভরসায় তিনি থেমে থাকলেন না । সশরীরে গিয়ে উপস্থিত হলেন গ্যাংটকে ।
গল্পের প্রয়োজনে যে সমস্ত স্থানের ছবি আঁকার প্রয়োজন ছিল....সেই সব লোকেশনে গিয়ে ছবি তুলে নিলেন নিজের ক্যামেরায় । বিভিন্ন angle থেকে প্রচুর ছবি তুললেন ।
কিন্তু সমস্যা হলো ফায়ার প্লেস এবং চিমনিযুক্ত একটি বাংলোকে নিয়ে ।গল্পের ডিমান্ড এরকম একটা বাংলো, কিন্তু কিছুতেই আর পছন্দ মত বাড়ি পাওয়া যায় না। কোনোটাতে চিমনি আছে তো ভেতরে গিয়ে দেখা যায় সেখানে ফায়ার প্লেসটাই নেই । কোথাও ফায়ার প্লেস পাওয়া গেলে দেখা যায় সেখানে রুম অ্যারাঞ্জমেন্টটি গল্পের সাথে ঠিক যাচ্ছে না ।সে এক বিরাট ঝামেলার ব্যাপার । এই ট্যুরে অভিজিৎ বাবুর সাথী হয়েছিলেন শিল্পী দেবাশীষ দেব । 
আপনারা যদি সেই গল্প দেবাশীষ বাবুর মুখ থেকে শুনতে চান , এই ভিডিওটিতে গিয়ে দেখতে পারেন (comix o graphics 2nd issue launch , part 4 video) ।
সেই প্রথম থেকেই অভিজিৎ বাবু যতগুলি ফেলুদা কমিক করেছেন আজ পর্যন্ত , সব গুলির জন্যেই নাকি তিনি সশরীরে সেই সব লোকেশনে গিয়ে ছবি তুলে এনেছেন এবং তারপর কমিক গুলি এঁকেছেন ।
এর থেকেই আমরা অভিজিৎ বাবুর কমিক প্রস্তুতের প্রতি একাগ্রতার কথা আন্দাজ করতে পারি । 

শিল্পী অভিজিৎ বাবুর সাথে তো আমাদের সকলেরই পরিচয় আছে তাঁর কাজের মাধ্যমে । কিন্তু মানুষ অভিজিৎ বাবু কেমন... সেটা জানতে চাইলে আমি অবশ্যই রেকমেন্ড করবো ইউটিউবে এই ইন্টারভিউ ভিডিও দেখুন । অভিজিৎ বাবুর ছোটো থেকে অনেক অজানা তথ্যই সেখানে শিল্পীর নিজের মুখ থেকে জানা গেছে । 

অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে কিছু তথ্য ....

১। শিল্পীর প্রিয় শঙ্কু কাহিনী : আপনারা কি আন্দাজ করতে পারেন , শিল্পীর প্রিয় শঙ্কু কাহিনী কোনটি ? মজার ব্যাপার হলো সেই গল্পটি এখনও বাকি রেখেছেন শিল্পী । "স্বর্ণপর্নী" গল্পটি অভিজিৎ বাবুর সব থেকে প্রিয় গল্প হওয়া সত্বেও এখনও পর্যন্ত সেই কমিক প্রস্তুত করেননি তিনি।

২। হাতে লেখা স্পীচ বাবল্ নাকি কম্পিউটার টাইপড্ : আমরা বিভিন্ন শিল্পীর বিভিন্ন ভাষায় করা প্রচুর কমিক ইতিমধ্যে পড়েছি । এবং আমরা সেখানে দু রকমের স্পীচ বাবল দেখেছি । এক , হাতে লেখা স্পীচ বাবল্ । এবং দুই, কম্পিউটার টাইপড্ স্পীচ বাবল্ । কিন্তু মজার ব্যাপার হলো অভিজিৎ বাবুর করা শঙ্কু এবং ফেলুদা কমিকগুলিতে আমরা দুরকমেরই স্পীচ বাবল্ দেখেছি । যেখানে প্রথম দিকের গল্পগুলির সমস্ত সংলাপ হাতে লেখা হতো , কিন্তু ইদানিং কালের কমীকগুলিতে কম্পিউটার টাইপড্ স্পীচ দেখা যায় । এর কারণ জিজ্ঞেস করায় শিল্পী বলেন , ছবিতে সংলাপের জন্য যে টুকু জায়গা রাখা থাকে , তাতে সম্পূর্ন স্পীচ গুলি বসাতে গেলে যুক্তাক্ষর এর জায়গা গুলি খুব ঘিঞ্জি হয়ে যায় । তাই তিনি কম্পিউটার টাইপড্ সংলাপই বেশি উপযুক্ত মনে করেন ।
শিল্পী দেবাশীষ দেব একসময় অভিজিৎ বাবুর কমিকগুলীর সংলাপ লিখেছেন ।

৩। লোকেশন পারফেকশন : যেমন আমরা আগেই আলোচনা করলাম, শিল্পী অভিজিৎ বাবু গল্পের লোকেশনগুলি নিয়ে খুবই খুঁতখুঁতে । কোনোরকম ত্রুটি তিনি বরদাস্ত করবেন না । সমস্ত লোকেশন হবে নির্ভুল এবং যথাযথ । তাই তিনি ফেলুদা কমিকগুলি করার জন্য নিজে লোকেশন ভিসিট করে যথেষ্ট পরিমাণে ছবি তুলে নিয়ে আসেন ।

৪। সময় : একটি পূর্ণাঙ্গ ফেলুদা বা শঙ্কু কমিক করতে অভিজিৎ বাবুর সময় লাগে 4 থেকে 5 মাস । অভিজিৎ বাবুর কাজ দেখলেই আমরা বুঝতে পারবো সেগুলো কতটা সময় আর যত্ন নিয়ে করা । প্রথমে একটা চিত্রনাট্য বানানো থেকে শুরু করে রাফ স্কেচ , লাইনস ড্রইং , রং , স্ক্রিপ্টিং সব মিলিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিক প্রস্তুত হয়ে বেরিয়ে আসতে সময় লাগে 4-5 মাসেরও বেশি । তার পরেও বর্তমানে অভিজিৎ বাবু আমাদের প্রতিবছর দুটি করে কমিক উপহার দিয়ে চলেছেন । যা একজন শিল্পীর তার কাজের প্রতি একাগ্রতার প্রমাণ দেওয়ার জন্য যথেষ্ট হয়তো ।

৫। কমিক পাঠক অভিজিৎ বাবু : আমরা যারা সাধারণ কমিক পাঠক... আমাদের হাতের সামনে একটা প্রিয় কমিক বই পেলেই সেটা সাথে সাথে গোগ্রাসে পড়ে শেষ করে ফেলি এক নিশ্বাসে । কিন্তু অভিজিৎ বাবু একজন সাধারণ পাঠক নন । তিনি একজন শিল্পীও। তিনি তাঁর প্রিয় কমিক বইগুলি পড়তে সময় নেন । মাঝে ব্রেক নিয়ে নিয়ে পড়েন । উদাহরণ দিতে গিয়ে অভিজিৎ বাবু বলেন , একটা সাধারণ টিনটিন এর বই পড়তে তাঁর সময় লাগে প্রায় 8 থেকে 9 ঘণ্টা । তিনি একবারে সবটা পড়ে নেন না । বইয়ে দিনের সীন গুলি তিনি পড়েন আসল দুনিয়ার দিনের বেলায় , সূর্যাস্তের সময়ের ঘটনাগুলি পড়েন সূর্যাস্তের সময় আবার রাতের ঘটনাগুলি পড়েন রাতের বেলায় । 

৬। অরিজিনাল কমিকস : অভিজিৎ বাবু নিজের অরিজিনাল ক্যারেকটার নিয়েও কমিক তৈরি করছেন অতীতে । তবে সেসব সম্ভবত প্রকাশিত হয়নি । বর্তমানে তাঁর নিজের অরিজিনাল গল্পের উপর ভিত্তি করে কমিক আসার সম্ভবনা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করায় তিনি বলেন , তাঁর এক একটি কমিক প্রস্তুত করতে যে এতটা সময় লাগে... সেই দীর্ঘ সময়টা সাপোর্ট করবে কে ? সেই জন্যেই আপাতত কোনো অরিজিনাল কমিক আসছে না । 

৭। অলঙ্করণে অভিজিৎ বাবু : ফেলুদার যে কয়েকটি অসম্পূর্ণ গল্প থেকে গিয়েছিল , যায় অলঙ্করণ সত্যজিৎ রায় নিজে করে দিয়ে যেতে পারেননি , সেই গল্পগুলি যখন বই আকারে বের হয় তখন সেই সব গল্পের অলংকরণের ভার পড়েছিল অভিজিৎ বাবুর উপর ।
"আদিত্য বর্ধনের আবিষ্কার" শীর্ষক অসম্পূর্ণ ফেলুদা গল্পে অভিজিৎ বাবুর করা অলঙ্করণ

ফেলুদা সমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড থেকে



শিল্পী অভিজিৎ বাবু সম্পর্কে আরও বাড়তি তথ্য জানতে হলে আমি বলবো পূর্বে উল্লেখিত ভিডিও তিনটি অবশ্যই দেখুন (আমি নিচে ভিডিও গুলির লিংক আরো একবার দিয়ে দিচ্ছি ) আমি শিল্পী অভিজিৎ বাবুর ভক্ত অনেকদিন ধরেই ছিলাম , কিন্তু এই ইন্টারভিউ গুলি দেখার পর মানুষ অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় কে আমার আরো বেশি ভালো লাগে ।শিল্পী অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের কাজের প্রতি একাগ্রতার কথা জানতে পেরে তাঁর কাজের প্রতি এবং তাঁর প্রতি আমার সম্মান অনেকগুণ বেড়ে গেছে। অবশ্যই দেখুন...




অভিজিৎ বাবুর করা কমিক গুলি পাবেন এখানে : অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন